শিশুশ্রম ও সভ্য সমাজ


          শিশু শ্রমিকের দুরবস্থার কারণ ও প্রতিকার।


https://bekarchele7.blogspot.com/2020/07/child-labour-and-today-society.html
https://bekarchele7.blogspot.com/




 Say No to Child Labour:
                                      ভারতবর্ষে শ্রমশক্তির জোয়ারে ভাটার টান থাকলে শ্রমিক শিশুর কিন্তু অভাব নেই। তাই সমস্যাদীর্ণ ভারতবর্ষে শিশু শ্রমিকদের সমস্যাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, বর্তমানে ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে শিশু শ্রমিকরা সরাসীর যুক্ত হয়ে পড়েছে। তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলিতে সুলভে শ্রমক্রয়ের যে ক্ৰমবর্ধমান ঝোঁক লক্ষ করা যাচ্ছে তার পশ্চাতে রয়েছে কম মজুরিতে বেশি মুনাফা লাভের আকাঙ্ক্ষা। আর এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে হাজার হাজার শিশু শ্রমিকদের বাস্তব জীবন। যাদের জীবনে নেই নিরাবিল আনন্দ, আছে নির্মমতা ও স্বাভাবিক বৈষম্য। এই শিশু শ্রমিকরা অন্য আর পাঁচটা শিশুদের ম সহজ সরল স্বাভাবিক জীবনের স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন। সত্যিই আজ শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বে শিশু শ্রমিকদের সমস্যা জ্বলন্ত সমস্যা রূপে চিহ্নিত হয়েছে।

শিশু শ্রমিকের ইতিহাসঃ 

                        শিশু শ্রমিক প্রথা চলে আসছে পুরাকাল থেকে। সমাজের অবহেলিত শিশুরা এক শ্রেণির মানুষের দাসত্ব করবার জন্যই যেন জন্ম নেয়। মধ্যযুগে ছিল দাস ব্যবসায়ীদের রমরমা বাজার। দাস ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঞ্ল থেকে দাসদাসী শিশু শ্রমিক প্রথার শুরু সংগ্রহ করে জাহাজ বোঝাই করে পাঠাতো পৃথিবীর বড়ো বড়ো বাজারে। আগেও লক্ষ্য করা গেছে ধনী খনি মালিকরা বা বড়ো জোতদাররা এইসব দাসদাসীদের ক্রয় করে খনি বা জমির বিভিন্ন কাজের জন্য পশুর মতো খাটাত, যতক্ষণ নাতাদের মৃত্যু হয়। এইসব দাসদাসীদের উৎপাদিত সন্তানরাও মালিকদের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হত এবং এরাই যখন একটু কর্মক্ষম হত তখন তাদের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হত। বিনিময়ে মালিকরা মুনাফা লুটত। আবার অত্যধিক পরিশ্রমের জন্য বা অপুষ্টিগত কারণে এদের মৃত্যু হলে মালিকদের কোন কৈফিয়ৎ দিতেও হত না।



https://bekarchele7.blogspot.com/2020/07/child-labour-and-today-society.html




বর্তমানে শিশু শ্রমিকঃ 

                 পশ্চিমবঙ্গে শিশু শ্রমিকদের খতিয়ান স্পষ্ট নয়। সমীক্ষা অনুযায়ী এটা দেখা গেছে, ৬৯% শিশু এই রাজ্যের বাসিন্দা এবং ৩১% অন্য রাজ্য থেকে আসা। এরা সকলেই সমাজের দুর্বলতম অংশের দরিদ্র পরিবারের শিশু এবং তারা কলকাতায় এসেছে সামান্য জীবিকার সন্ধানে, খাদ্য এবং মাথা গোঁজার একটু জায়গার জন্য। এই শিশুরা সারাদিনে গড়ে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় কাজ করে। পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, পশ্চিমবঙ্গে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কম নয়। শহর কলকাতায় এবং অন্যান্য শহরে প্রত্যেক মধ্যবিত্ত বাড়িতে একজন করে অল্পবয়সী মেয়েকে দিয়ে ফরমায়েশি কাজ করানো হয়। তাছাড়া নানা কুটির শিল্পে যেমন (হাওড়া জেলায়) জরির কাজ, ছোবড়া পেটানো মোটর গ্যারেজে বেশ কিছু শিশু শ্রমিক কাজ করে। শুধু তাই নয়, গ্রামাঞ্চলে এখনে কৃষিকার্যে, ইটভাটায়, পাথর ভাঙার কাজে শিশু-শ্রমিকদেরই প্রাধান্য। এছাড়া রয়েছে নানা কলকারখানায় নিযুক্ত শিশুশ্রমিক এবং এরা বেশিরভাগই কম বেতনে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে।


শিশু শ্রমের কয়েকটি কারনঃ 

        ভারতবর্ষে তথা পশ্চিমবঙ্গে শিশু শ্রমিকদের দুরবস্থার প্রধান কারণ তাদের পরিবারের দারিদ্র। আর্থিক কারণে বহু পরিবারের বাবা-মা তাদের শিশুটিকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়। তবে এও দেখা গেছে, কেউ কেউ ছেলেমেয়েকে কাজে পাঠিয়ে তাদের আজিত অর্থে নেশা পানও করে থাকেন। 

দ্বিতীয়তঃ- গৃহকর্মে, হোটেলে, দোকানে যে সমস্ত শিশু শ্রমিকদের নিয়ােগ করা হয়, তারা খায় কম, কাজ করে বেশি। 
তৃতীয়তঃ-  এরা প্রতিবাদ করতে পারে না, যে যা বলে তাই করে। 
চতুর্থতঃ-  আইন জানে না বলেই দর কষাকষি করতে পারে না। 
পঞ্চমতঃ- নামমাত্র মজুরিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে অরাজি হয় না। এবং যে কোন ব্যক্তির সহকারী হিসেবে কাজ করতে রাজি থাকে। 
যষ্ঠতঃ- এরা কখনো সংগঠিত হয়ে দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে না। 
সপ্তমতঃ- নারী-পুরুষ ভেদাভেদ বাধে। 

                     যেমন, আজকের সমাজে একটি সাধারণ পরিবারে শিশুপুত্রের থেকে শিশুকন্যার কদর কম। তাই শিশুকন্যাটিকে কাজে লাগিয়ে দেয় অর্থ উপার্জনের জন্য। গৃহস্থালির কাজে শিশুকন্যার নিযুক্তির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধ, শিক্ষার অভাব, সার্বিক সচেতনতার অভাব এর অন্যতম কারণ।



https://bekarchele7.blogspot.com/2020/07/child-labour-and-today-society.html

প্রতিরোধের উপায়ঃ


প্রথমতঃ  শিশু শ্রমিকদের দুরবস্থা নিরসনে প্রথমেই প্রয়োজন সকলের মধ্যে যথার্থ শিক্ষা ও সচেতনতা। 
দ্বিতীয়তঃ  জনসংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যায় নামিয়ে আনা। অর্থাৎ ভারতবর্ষে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ যে হারে ঘটছে তাতে আগামী শতাব্দীর শুরুতে ভারত চিনকে ছাড়িয়ে জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে প্রথম স্থান গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যার হার কমানো একান্ত জরুরি। 
তৃতীয়তঃ  ছেলে ও মেয়ের ভেদাভেদ রোধে যথার্থ শিক্ষার প্রয়োজন। মেয়ে ও ছেলে উভয়েই সমান এই বোধে উদ্দীপিত করা। 
চতুর্থতঃ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন। কেননা গৃহকর্মে নিযুক্ত শিশুশ্রমিকরা যেভাবে তাদের গৃহকর্তা বা কত্রীর কাছ থেকে বঞ্জনা-গঞ্জনার শিকার হয়, তা রীতিমত বেদনার। একজন গৃহকর্তা বা গৃহকত্রী তার নিজের সন্তানের প্রতি যে যত্ন নেন, তার ১০ শতাংশও যত্ন নেন না তারই পরিবারে সর্বক্ষণের জন্য নিযুক্ত পরিচারক- পরিচারিকাটির প্রতি। 
পঞ্মতঃ  শিশু শ্রমিকদের জন্য যে আইন আছে তাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ না দেখিয়ে তার যাতে যথাযথ প্রয়ােগ হয় তা দেখা উচিত। 
ষষ্ঠতঃ  সরকার ভােটের দিকে না তাকিয়ে যদি এর প্রতিবাদ করে ও প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে আখেরে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। 
সপ্তমতঃ  প্রাথমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করলেও দেখতে হবে সব শিশুরাই যাতে বিদ্যালয়ে যায় এবং তারা যেন মাঝপথে বিদ্যালয় ত্যাগ না করে। 
অষ্টমতঃ  যারা প্রতিকূল পরিবেশে, অস্বাস্থ্যকর জায়গায় দিনের পর দিন প্রচুর পরিশ্রমে রোজগার করে তাদের যাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়, তা দেখা দরকার।


শিশু শ্রমিক আইনঃ

      ১৯৪২-এ রাষ্ট্রসংঘ জেনেভা সনদে শিশুদের অধিকার ঘোষণা করেন। এই ঘাষণায় বলা হয় যে, শিশুরা যাতে শৈশবে সবচেয়ে সুখী জীবন-যাপন করে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করার প্রয়োজনে তাদের স্বাভাবিক অধিকার ও স্বাধীনতা দিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে দশটি নীতি গৃহীত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে এই নীতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়। এরই ফলশ্রতি হিসেবে ভারতবর্ষে ১৯৮৬-তে শিশু শ্রমিক আইন নিষিদ্ধকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়শিশুদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে (রেলওয়ে, ডাক, কার্পেট বোনা, সিমেন্ট প্রস্তুত, নির্মাণ কাজ, কাপড় ছাপা, কাপড় রং করা, বিড়ি বাধা, কসাইখানায় কাজ প্রভৃতি) কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিযেধাজ্ঞা থাকবে।



https://bekarchele7.blogspot.com/2020/07/child-labour-and-today-society.html

সবশেষে

        ১৯৭৪ সালে ভারত সরকার শিশুদেরকে অন্যতম জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষণা করলেও অনেক শিশু শ্রমিক ফুল ফোটার আগেই কুড়ি অবস্থায় ঝরে যাচ্ছে। যারা শিশু শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা ভাবছেন, মাঠে-ময়দানে বক্তৃতার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন, তারাই হয়ত আবার ১০-১২ বছরের বয়সী শিশুদের দুমুঠো অন্নের পরিবর্তে তাদের দিয়ে কত ফরমায়েশি কাজ করিয়ে নিচ্ছেন এবং নানাভাবে তাদের শোষণ করছেন।  তাই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা তাদের সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এলে এবং এ ব্যাপারে সরকারি পদক্ষপ দৃঢ় হলে আমরাও সুকান্তের মত বলতে পারব;-

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার
child labour and today society


IF Any One Like Our Work,Our Blog Then Support Us On Google Pay - Our Google Pay UPI ID- roysuvajit057@oksbi




Read More:-


Previous
Next Post »