লকডাউন,ভগবান ও যাদবপুর ঝিলপাড় / Lockdown,God and J.U


ভগবান কোথায়?

লকডাউন,ভগবান ও যাদবপুর ঝিলপাড় / Lockdown, God And Jadavpur University(bekarchele7.blogspot.com)
Jadavpur University(https://bekarchele7.blogspot.com/)

                          ভগবান কোথায়? এই প্রশ্নটা আমি এই জন্য আজ করছি যে আপনাদেরকে মনে করাতে পারি যে একসময় এটা আপনাদের ও প্রশ্ন ছিল। অন্তত এটা না হোক এই ধরনের কিছু। যেমন ঈশ্বর কি? ঈশ্বর আছে না নেই? ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সন্দেহ হয় এমন নানা প্রশ্ন।



                        হয়তো প্রশ্নগুলো এখনও আছে। যে কোনো সাধারন মানুষের মত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই প্রশ্নগুলো ভুলে যাই। কারন ঈশ্বর, ভগবানরা কখনও জবাব দেয় না।


                   সময়টা মাসখানেক আগে, স্থান যাদবপুরের ঝিলপাড়, কেউ একজন নিজের অজান্তে এই প্রশ্নের এক খুব প্রাসঙ্গিক উত্তর দিয়েছে। আমার আজ ও মনে আছে, আর সারা জীবন ও থাকবে।

                    তাহলে এক গল্প বলা যাক আজ থেকে প্রায়  ১২ বছর আগে, আমার বয়স তখন প্রায় ১৪ বছর হবে। যৌবনের নানান রেখা ও লক্ষণ শরীরে ও মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে। জীবনের এমনই এক শৈশব ও কৈশরের সন্ধিক্ষণে নানান প্রশ্ন ভিড় করে আসত প্রতিদিন - প্রতিনিয়ত – প্রতিক্ষণে।



                এমনি এক সময়ে আমরা(With Family) ঘু্রতে বেড়িয়েছি। বাবা- মায়ের Love Marriage হওয়ার দরুন মামাবাড়ি খুব কাছাকাছি। আমরা ঘুরতে বেড় হলেই মাসি আমাদের সঙ্গ দিত। সবাই বাসে উঠেছি আর ঝগড়া, জেদ করে সব বাচ্চাদের মত আমিও জানলার ধারের সিটে গিয়ে বসেছি। আমার Favorite জায়গা। এখানে হাওয়া Direct মুখে এসে লাগে, তারপর ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেড়িয়ে যায়। আর প্রতি সেকেন্ডে বদলে যাওয়া Views। 


              তবে আমার এই সুখ বেসিক্ষণ সহ্য হল না - বিধিবাম, আমার শত্রু, সামনে Red Light। গাড়ি থেমে যাবে, হাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, Views প্রতি সেকেন্ডে Change হবে না। গাড়ির হর্ন ও Pollution। 



             বাইরে থেকে এক কাতর মিনতি ‘ভগবানের নামে কিছু দাও দাদা দুদিন ধরে কিচ্ছু খাইনি' চোখ গেল জানলার বাইরে, আমারি বয়সি এক ছেলে- চোখে কাতর আবেদন, মুখ Expression Less, গায়ের রঙ রোদে পোড়া তামাটে। মাথা ভরতি চুল, মোটা ভ্রূ, ছেড়া জামা, রোগা শীর্ণ পাতলা হাত আমার দিকে উঁচিয়ে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাসির দিকে তাকালাম। মাসি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে যাওয়ার আগে বাস ছেড়ে দিল। Red Light ততক্ষণে Green হয়ে গেছে। হয়তো আজ ও তার খাওয়া হবে না’ ভেবে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। Upset হয়ে পড়লাম। মাসি বলল – ‘ছাড়, ভগবান আছে ওদের Help করবে। যাদের কেউ থাকে না তাদের ভগবান থাকে।

              প্রশ্নের পাহাড় ভেঙ্গে পড়লো মনে- ভগবান আসলে কে? ভগবান আসলে কি? ভগবান থাকেন কোথায়? কেমন দেখতে? সেবারে এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। আর ধীরে ধীরে সমাজ শিখিয়েও দিয়েছে ভগবানের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে নেই।

যাদবপুর ঝিলপাড়

          প্রায় বছর দুয়েক আগে বাংলা অনার্স Complete করে Jadavpur University তে M.A Admission নিয়েছি। হাসি- আড্ডা- গল্প-গান- দোস্তি- ইয়ারি- বন্ধু তে হেব্বি কাটছিল। বিকালে ক্লাস শেষ হলেই Sunset Enjoy করার মত এক জায়গা ছিল ক্যাম্পাসে ‘ঝিলপাড়’, সেখানেই চলে যেতাম প্রতিদিন।

          ( একটা কথা বলে রাখি আমি নাস্তিক নই, আস্তিক ও নই। আসলে আমি কখনও নাস্তিক কিমবা আস্তিকের বিতর্কে যাইনি, প্রয়োজন মনে করিনি। ঈশ্বর থাকলে ভালো না থাকলে আর ভালো, আমার তাতে কোন রকম সমস্যা নেই। যখনই আমাদের চারপাশে সমাজের এত হিংস্রতা, নির্লজ্জতা, পাশবিকতা দেখি তখন মনে হয় না ঈশ্বর বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না। আবার যখন ঘনিয়ে আসা সন্ধের মুখে যাদবপুরের ঝিলপাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখি। সূর্যাস্তে আলোর খেলা, রঙের খেলা, বর্ণচ্ছটা দেখি মনে হয় ভগবান থাকলে ও থাকতে পারে। এমন Brilliant Artist তো কোন মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। )

                   এমনই এক দিন ছিল, পরিষ্কার নীল আকাশে গেরুয়া রঙের বন্যা ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে অন্ধকার। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা, আলো- অন্ধকারের খেলায় সূর্যাস্ত হটাৎ পিঠে কেউ  হাত রাখল। আমি পিছন ফিরে দেখি বছর ১৪ এর এক ছেলে- চোখে কাতর আবেদন, মুখ Expression Less, গায়ের রঙ রোদে পোড়া তামাটে, মাথা ভরতি চুল, মোটা ভ্রূ, ছেড়া জামা, রোগা শীর্ণ পাতলা হাত আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলছে ‘ ভগবানের নামে কিছু দাও দুদিন ধরে কিছু খাইনি। আজ আমার সামনে কোন Red Light নেই। ভাবলাম এর সাথে একটু কথা বলি। ও স্কুল যায় কি না, বাড়িতে কে কে আছে, সব শেষে একটা ২০০ টাকার(সবে মাত্র বিবেকানন্দ স্কলারশিপের টাকা পেয়েছি) নোট বার করে দিলাম আর বললাম তোর আর সব বন্ধু দের মধ্যে দিয়ে দিবি আর ৫ মিনিটের মধ্যে এখানে আবার আসবি, কেমন। একগাল হাসি হেসে, মাথা নেড়ে চলে গেল।



              আমি আশা করেছিলাম ও আসবে, কিন্তু ৫ মিনিট পরেও যখন এল না আমি আশা ছেড়ে দিলাম। আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম গেরুয়া রঙ আবছা হতে শুরু করেছে। ততক্ষণে আমার এক বান্ধবি আমার পাশে এসে বসেছে, আমরা কথা বলতে শুরু করেছি।



                ১০ মিনিট পর সেই ১৪ বছর আমার কাছে ফিরে এল এবার দেখলাম ওর চোখে এক অদ্ভুত চমক, মুখে হাসি। তার কত কথা কি করে সে টাকাটা খুচরো করে সবাই কে দিয়েছে। কি করে সে যার সাথে কথা বলে না তাকে ও দিয়েছে।



                আমি ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম- আচ্ছা একটা কথা বল তুই এমন কেন বলিস যে ‘ভগবানের নামে কিছু দাও’ । বরং পড়াশুনার জন্য বলতে পারিস তাতে হয়তো বেশি মানুষ সাহায্য করবে। ও হাসতে থাকল দাদা তুমি ও না কেমন কথা বল-(exactly কি বলেছিল খেয়াল নেই তবে এমন কিছু একটা বলেছিল) “ভগবান কি নিজে আসবে আমাদের সাহায্য করার জন্য? আমাদের জীবনের হাসি আর খুসি তো ভগবান তোমাদের মত কারো হাত দিয়ে পাঠাবে আমাদের কাছে”। মনে হল যেন বছর পুরান কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিল।

               আজ যখন আমাদের জীবনের এত কিছু বদলে গেছে। আর আমরা সব House Arrest, Lockdown এ বন্দী। আমরা কিন্তু কেউ খারাপ নেই, সবাই নিজেদের Life এর Comfort Enjoy করছি। নিজেদের ভুলে যাওয়া সখ পুরন করছি, Passion Follow করছি। এই সময় বাইরে এমন মানুষ ও আছে যাদের কাছে কিছুই নেই, তাদের রান্নাঘর রান্নাঘর নয় সেখানে আজ রান্না হয় না, হয়তো কারো মাথার উপর থাকার ছাদ ও নেই।


                  আর এই সময় ভগবান ও আসবে না এদের সাহায্যের জন্য। ভগবান যদি আসত আমাদের সমাজ জীবন এমন কি হত? আসল কথা হল আমরা আমাদের মধ্যে মানবতা রূপি যে ভগবান আছে তাকে ভুলে গেছি। আমরা মানুষ হয়ে মানুষের কথা ভুলে যাই।

                  বেশ ভাল বলেছিল সেদিন ১৪ বছরের সেই ছেলেটা। ভগবান তো আমাদের হাতে দিয়েছে কারো জীবনের হাসি খুসি সুখ। শুধু তাদের কাছে পৌঁছে দিতে দেরি। যদি কারো জীবনে হাসি খুসির কারন হয়ে উঠতে পার তাহলে এতাই সঠিক সময়।


               ভগবান হয়তো করোনার ভয়ে আজ পৃথিবীতে আসবে না। কিন্তু আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভগবান হয়ে উঠতে পারি।
-----------------------ooo---------------------------


lockdown and j.u, যাদবপুরও লকডাউন 

j.u jhilpa,যাদবপুর ঝিলপারের গল্প
lockdown and jadavpur university
we are j.u student

bangla hons j.u , যাদবপুর ও বাংলা অনার্স
a evening in j.u
j.
u student story বযাদবপুরের গল্প

story of j.u studentযাদবপুর ইউনিভার্সিটির গল্প
story of j.u যাদবপুরের প্রেম
j.u jhilpar love story
last news of jadavpur unviersity,

bekarchele j.u


Previous
Next Post »