পথের পাঁচালী ও অভিনেতা হরিহর (কানু বন্দ্যোপাধ্যায়) / Pather Panchali And Actor Harihar(Kanu Banerjee)

পথের পাঁচালী  ও হরিহর (কানু বন্দ্যোপাধ্যায়) /  Pather Panchali And Harihar(Kanu Banerjee)



                         সত্যজিৎ রায় প্রথম ছবি করতে যে কি বিপুল পরিমান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে পথ চলেছিলেন অল্প বেশি তা আমরা সকলেই জানি। নতুন করে আর সে কথা বলবো না, আর বলতে শুরু করলে শেষও হবে না। প্রথম সমস্যা তো ছিল ছবিতে বিনিয়োগ করার মত যথেষ্ট টাকার অভাব।
দ্বিতীয়ত সময়। বেশ অনেকটা সময় ধরে চলেছিল ছবির কাজ, এর মধ্যে যে ইন্দিরা ঠাকুরন মারা যায়নি, কিমবা অপু-দুর্গা লক্ষণীয় ভাবে বেড়ে ওঠেনি তা আমাদের ভাগ্য ভালো।

পথের পাঁচালী  ও হরিহর(কানু বন্দ্যোপাধ্যায়)/ Pather Panchali And Harihar(Kanu Banerjee)


  
           আজ কথা বলবো “পথের পাঁচালী” ছবিতে হরিহরের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন যে কানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে নিয়ে। যেহেতু অনেকটা সময় নিয়ে চলছিল ছবির কাজ তাই চুল কেটে এসেছিলেন হরিহর, আর তাতেই বাতিল হল পথের পাঁচালীর শুটিং।

            ‘পথের পাঁচালী’র শুটিং শুরু হবে। পরিপাটি করে চুল কেটে এসেছেন অভিনেতা। সেটা দেখে, সঙ্গে সঙ্গে শুটিং ক্যানসেল করে দিলেন সত্যজিৎ। আর্থিক ক্ষতি হবে এতে, জানেন তিনি। কিন্তু তাই বলে শুটিংয়ের সঙ্গে কোনোরকম আপোস করতে পারবেন না। যতদিন না ‘হরিহরের’ মানানসই চুল গজাবে, ততদিন বন্ধ থাকবে সব। এক মুহূর্ত থমকে গেলেন কানাইলাল, ওরফে কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। না, একফোঁটাও রাগেননি তিনি। বরং পেশাদার চোখ ঠিকই চিনে নিয়েছিল তাঁর পরিচালককে। পরবর্তীতে বলেওছেন, এতদিনে একজন সত্যিকারের পরিচালকের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস।

              ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’— দুটি ছবিতেই হরিহরের ভূমিকায় দর্শক মনে রেখেছে কানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সত্যিই কি মনে রেখেছে? স্মৃতিচারণায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উৎকর্ষ ও শ্রেষ্ঠতার বিবেচনায় অনেক সময় তাঁদের নামের সঙ্গে কিছু উপাধি বা বিশেষণ যুক্ত হয়ে যায়—যেমন নটসূর্য বা রসরাজ ইত্যাদি। অর্ধশতাব্দীর বেশি অভিনয় করলেও কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে সেরকম কোনও ভূষণ যুক্ত হয়নি। অনেক সময় আবার অভিনেতার সৃষ্ট কোনও চরিত্র এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, দর্শকসাধারণের কাছে সেই চরিত্রের নামেই অভিনেতাকে অভিহিত করা হয়। যেমন আমরা দেখি Harry Potter কে, আমরা ক'জন জানি তার আসল নাম Daniel Jacob Radcliffe… ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’তে হরিহর চরিত্রে আন্তর্জাতিক মানের অভিনয় করার পরেও কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এমন কিন্তু ঘটেনি।”


                বাস্তবিকই, চলচ্চিত্র আলোচনা থেকে একপ্রকার বাদই গেছেন তিনি। অথচ চিরদিনই অভিনয়ের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। একসময় কাছ থেকে পেয়েছিলেন অমৃতলাল বসু, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফিদের। পেয়েছিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়িকে। তিনিই ছিলেন কানুবাবুর অভিনয়ের শিক্ষক। শিশির ভাদুড়ির যাবতীয় নিষেধ সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ে আসবেন। তাঁর রক্তে তখন ঢুকে গেছে মঞ্চ, লাইট। শিশিরবাবুও হাল ছাড়লেন। শ্রীরামপুর টকিজে ‘আলমগীর’ নাটকে তাঁর সঙ্গেই অভিনয় করলেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকেই সখ্য শুরু। ১৯৪৮ সালে ‘দুঃখীর ইমান’ নাটক অবধি টানা একসঙ্গে অভিনয় করে গেছেন গুরু-শিষ্য।

                      নাটকের সূত্রেই রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ পাওয়া। ১৯৩৬ সালে ‘যোগাযোগ’-এর নাট্যরূপ অভিনীত হচ্ছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ দেখতে এসেছিলেন সেই নাটক। সেই নাটকে নবীনকৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে এত মুগ্ধ হন রবি ঠাকুর, যে জোড়াসাঁকোয় নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর মতে, ঠিক যেমনটি ভেবে লিখেছিলেন, কানুবাবু যেন ঠিক তেমনটিই হয়ে উঠেছিলেন।

                   তবে এমন প্রশংসা শিশির ভাদুড়িও করেছিলেন। একটা নাটকে কানুবাবু’র অভিনয় দেখে এত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে, ভুলেই গিয়েছিলেন নাটকে তাঁরও একটি চরিত্র আছে। সারা জীবনে আরও বহু কিংবদন্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। অবশ্য তিনি নিজেও তো ছিলেন তাঁদেরই একজন। অভিনয়ের ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন উত্তমকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়দের। তাঁর নিজের রুপোলী পর্দায় আসা ১৯২৭ সালে। সবাক নয়, নির্বাক ছবি ‘দুর্গেশনন্দিনী’ দিয়েই শুরু তাঁর বড় পর্দায় অভিনয়।

                       আমরা, মানে সংস্কৃতিপ্রবণ বাঙালিরা নাকি বড়ই স্মৃতি আঁকড়ে থাকি। কিন্তু সেই স্মৃতিতে কোথায় কানু বন্দ্যোপাধ্যায়? টালা ব্রিজের পাশে একটি আবক্ষ মূর্তি ছাড়া কানুবাবু বোধহয় হারিয়েই গেছেন সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে থেকে। মরা হাতি লাখ টাকা হলেও, এখানে গল্পটা ঘুরে গেছে অনেকটা। শম্ভু মিত্র সেইজন্যই বোধহয় অনেক দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন, “কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে অপূর্ব অভিনয় হয়েছে এ ছবিতে (পথের পাঁচালী), তা কি আদর পাবে?”…


বলা হয় বাঙালি স্মৃতিকাতর, নস্টালজিয়ায় চুপচুপে থাকে শরীর মন, তাহলে ও আজ নেই কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরাতন সব কিছু ভুলে বাঙালি কি অতিক্রম করছে তার বাঙালীত্বকে?



(ভালো লাগলে ও ভালো না লাগলে Comment করে জানাতে পারেন।
আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ থাকলে তাও জানাতে পারেন।)

সত্যজিত রায় ও পথের পাঁচালী,পথের পাঁচালী ও হরিহর,পথের পাঁচালী সিনেমার হরিহর,পথের পাঁচালী সিনেমার চরিত্র ,হরিহর ও পথের পাঁচালী, হরিহর ও কানু বন্দ্যোপাধ্যায়,কানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও পথের পাঁচালী, বঞ্চিত কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মুছে যাওয়া কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, পথের পাঁচালীর কানু বন্দ্যোপাধ্যায়,satyajit roy pather panchali,satyajit ray movie pather panchali,satyajit ray pather panchali,pather panchali satyajit roy,satyajit ray pather panchali movie,pather panchali o kanu banerjee,kanu banerjee and harihor, pother panchali o hoarihor harihar,bekarchele.বেকারছেলে



Previous
Next Post »